Thursday, June 5, 2025

        বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভব, বিকাশ ও বিউপনিবেশায়ন

সৈয়দ নিজার

( ভাবাংশ )

বিশ্ববিদ্যালয় এর আবির্ভাব

কোন কিছুই হঠাৎ করে আবির্ভাব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় ও তার ব্যাতিক্রম নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবির্ভাব বলতে কবে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় (University) নাম টি ব্যবহার শুরু হয়েছে এমন টাও বলতে পারি।

বিশ্ববিদ্যালয় কি?:

                    বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি মূলত এসেছে ইংরেজি  ‘University’ শব্দ থেকে। যেটি আবার আসে ল্যাটিন শব্দ ‘universitas’ থেকে, যার অর্থ ‘সমগ্র’, ‘যৌথ’ বা ‘একত্র’। যা আমাদের ত্যামন কোন সংজ্ঞা প্রদান করে না যা দ্বারা আমরা এর ব্যবহার বুঝতে পারি। কেননা, একই শব্দ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাবহ্রত হচ্ছে। যেমন : ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘ইউনিভারসিটি অফ লন্ডন’ অথবা ‘কিডস ইউনিভার্সিটি অফ স্কুল’। যেহেতু আভিধানিক অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এর অর্থ বোঝা যায় না, সেহেতু ইতিহাস থেকে দেখতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে কি বোঝয়।

                    মধ্যযুগে ইউরোপে যখন নগর রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়, তখন  আইন ও বিচার কার্য পরিচালনার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন হয়, এই শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথম প্রতিষ্ঠিত ইউনিভার্সিটি এর নাম ছিল ল্যটিনে ‘Universitas Bononiensis’ যার বর্তমান নাম  ‘University of Bononese’. যা ছিল চার্চ এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ।

                     বলনিয়া ছিল ছাত্রদের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়। পরবর্তীতে শিক্ষকেরা প্যারিস ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন, যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নটরডেমের ক্ষমতা লোপ করা।

বিশ্ববিদ্যালয় এর বিবর্তন

বিশ্ববিদ্যালয় মূলত ২ প্রকার।

১) পাঠদান কেন্দ্রিক।

২) গবেষণা কেন্দ্রিক।

মধ্যযুগীইয় এবং প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ছিলো পাঠদান কেন্দ্রিক। কেননা সেগুলো নগর রাস্ট্র পরিচালনার জন্য দক্ষ শক্তি উৎপাদন এর জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যা ছিলো অতীত আশ্রয়ই পাঠদান, জ্ঞান উৎপাদন এর কোন লক্ষ্যই ছিলো না। কিন্তু ১৯ শতকের গোড়ার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ইউরোপে গবেষণা কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় এর আবির্ভাব হয়। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রথম গবেষণা কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় এর আর্বিভাব, উদ্দেশ্য,রুপান্তর এবং প্রভাব

         আর্বিভাব:  

বাংলায় প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হয় ১৭৫৭ সালে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।যেখানে শুধু ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা নেওয়া হত। যা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেখানে কোন পাঠদান দেওয়া হত না। ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত পাজ্ঞাব বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ভারতীয় প্রথম ইউরোপীয় ধাচের পাঠদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়। ব্রিটিশ সরকার ১৯০৪ সালে ভারতের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে পাঠদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় এ রুপান্তর করে।

         উদ্দেশ্য:

বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল কারণ ছিল দীর্ঘ সময় বাংলা শাসন নিশ্চিত করা। আরও কিছু উদ্দেশ্য ছিল তা নিচে বলা হল:

1.     ইংরেজি দাপ্তরিক ভাষা হওয়ার কারণে বাংলা থেকেই দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া।

2.     মনস্তাত্তিক ভাবে ভারতীয় উপমহাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করা।

3.     ইউরপীয়দের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাওয়া।

এই সকল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ছিল পাঠদান কেন্দ্রিক এবং চাকুরিজীবি তৈরী এর অন্যতম লক্ষ্য।

রুপান্তর:

         ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালইয় গুলোতে ত্যামন কোন পরিবর্তন আসেনি। ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাশ করা হয়। যেখানে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোয় যোগদানের অধিকার প্রদান করা হয়। যেটা মোটেও জ্ঞানজাগতিক স্বাধীনতা নয়।

প্রভাব:

         ঔপনিবেশিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গভীর। ব্রিটিশ সরকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলেও, তার পাঠদানে স্থান পায়নি কৃষি বিদ্যা। যদিও এই ভূখন্ড ছিল কৃষিপ্রধান এবং ঔপনিবেশিক পর্বে খাদ্য সংকট ও দূর্ভিক্ষ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

          এছাড়াও তখনকার পাঠদান হিসেবে পড়ানো হত ইতিহাস, দর্শন এবং ইংরেজী সাহিত্য। এই ইউরোপ কেন্দ্রিক শিক্ষার কারণে এই অঞ্চলের শিক্ষিত মানুষের সংস্কৃতি ও রুচিতে পরিবর্তন আসতে শুরু করে, বিচ্ছিন্ন হয়ে পরে লোকজ সংস্কৃতি থেকে। এর ফলে হয় জ্ঞানতাত্ত্বিক বিচ্ছেদ। এ কারণে হয়ে ওঠেনি এ অঞ্চলের জ্ঞান চর্চা।

লেখকের প্রস্তাবনা:

1.     সর্বজনের জ্ঞান সর্বজনের জন্য।

2.     সার্বিক জ্ঞানের নামে পশ্চিমা জ্ঞানকান্ডের শিক্ষা নয়, বরং জ্ঞানতাত্ত্বিক বহুত্ববাদ চর্চা।

3.     বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগ ভিত্তিক নয়, পদ্ধতি ভিত্তিক বিভাজন।

4.     তা আঞ্চলিক এবং জাতীয় বিষয়ে জ্ঞানকান্ড নির্মাণের মধ্য দেয়ে বৈশ্বিক হবে।

5.     শিক্ষার্থীর মূল ঊদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান এর সঙ্কট চিহ্নায়ন এবং তা নিরশন করে নতুন জ্ঞানের ঊদ্ভাবন।

6.     শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নয়, ঊত্তর সাধক ও পূর্ব সাধক সম্পর্ক।

7.     বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অধি-বিশ্ববিদ্যালয় রুপে কর্মতৎপরতা চালাবে, দেশের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা এবং শিক্ষার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করবে।

পর্যালচনা:

          এই বই এর আলোচনা থেকে একটা মৌলিক প্রশ্নের ঊত্তর আমরা পেয়ে যাই, সেটা হল আমাদের স্বাধীনতার এত পরেও আমাদের দেশের সার্বিক ঊন্নতি এত ধীর গতি অথবা নেই কেন?

          এর ঊত্তর এটা যে, এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেখানে আমাদের আঞ্চলিক জনসাধারণের সমস্ত দূরুহ সমস্যা, গুরুতর প্রয়োজন, দেশের সার্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা নিয়ে কাজ করার কথা সেখানে আমরা ইউরোপীয় জ্ঞানচর্চা করি। এই জ্ঞানতাত্ত্বিক বিচ্ছেদ হচ্ছে এই সমস্যার মূল অন্তরায়।

এছাড়াও এই ইউরপীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাব আরও গভীর। এটাকে আমরা পরম সত্য হিসেবে বিশ্বাষ করি, যার কারণে এটাও যে ভূল হতে পারে তা বোধ্যগম্য হয় না। যার চরম পর্যায়ে এখন আমরা দেখতে পাই আমাদের সামাজিক, নৈতিক, মানসিক অত্যন্ত খাড়া ঊদ্ধৃমূখী অবক্ষয়।  

          এই সমস্যার সমাধানে সৈয়দ নিজার বিশ্ববিদ্যালয়ে্র বিঊপনিবেশায়ন প্রস্তাব রাখেন যার রুপরেখা ঊপরে দেওয়া হয়েছে।

          কিন্তু বইয়ের বিস্তারিত আলোচনায় তিনি এ বিশ্বাষ এর প্রতি আহ্ববান জানিয়েছেন যে পরম সত্য বলে কিছু নাই, সব কিছু সংবৃত সত্য এবং একে বিঊপনিবেশায়নের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন। যেটা যেকোনো ধর্মীয় বিশ্বাষের সাথে সাংঘর্ষিক এবং যা বিজ্ঞান সমর্থিতও নয়।

          এছাড়াও তিনি জ্ঞানচর্চার পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়েছেন, তাও কিছুটা অযৌক্তিক। কেননা, ক্ষতিকর জ্ঞানচর্চার বিরুপ প্রভাব অত্যন্ত ভয়াবহ। যার চর্চা না করাই কাম্য।


~By Md Siam Ali Shikder

Tuesday, June 3, 2025

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জ্ঞান সৃষ্টি এবং সমাজের বাস্তব সমস্যা সমাধানে কাজ করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্কুল-কলেজের মতো শুধু পাঠ্যপুস্তকভিত্তিক শিক্ষা প্রদানে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল গবেষণার কেন্দ্র ও নতুন সমাধান তৈরির স্থান, সেখানে তা হয়ে উঠছে শুধু একাডেমিক ডিগ্রি অর্জনের একটি মাধ্যম।  


যদিও কিছু গবেষণা হয়, তবে তা অধিকাংশ সময় আন্তর্জাতিক বা গ্লোবাল সমস্যাকে কেন্দ্র করে। আমাদের দেশের স্থানীয় বা বাস্তব সমস্যা নিয়ে তেমন গবেষণা হয় না। এর একটি কারণ হতে পারে, গ্লোবাল রিসার্চ করলে বিদেশে স্কলারশিপ বা উচ্চতর ডিগ্রির সুযোগ পাওয়া যায়, কিন্তু স্থানীয় গবেষণায় তেমন সুবিধা নেই। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেদিকেই বেশি মনোযোগ দেন।  


এছাড়াও, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ভালো উদ্যোগ ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়। এই সব কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের জীবনের সাথে সম্পর্কিত সমস্যাগুলোর কার্যকর সমাধান দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।

~By Jahed Ahmed

Monday, June 2, 2025

 

বিশ্ববিদ্যালয় : উদ্ভব, বিকাশ ও বিউপনিবেশায়ন

লেখক: সৈয়দ নিজার

 

বিশ্ববিদ্যালয় বিকাশ,উদ্ভব ও বিউপনিবেশায়ন বইটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ। বইটি বিউপনিবেশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত রূপ। বইটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরেছেন। সেই সাথে কেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ বহিরবিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনো পিছিয়ে ও এই সমস্যার সমাধানও আলোচনা করেছেন। সমাধানের এই পদ্ধতিকে বিউপনিবেশায়ন বলা হচ্ছে। সর্বপরি বইটিতে উপমহাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য, মূল সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে লিখা হয়েছে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণত দুই ধরনের, পাঠদানকেন্দ্রীক ও গবেষণাকেন্দ্রীক। পাঠদানকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় 'প্রথম প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয় '। ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ প্রথমে পাঠদান কেন্দ্রিক ছিল। এগুলোতে সাধারণত আইন,ধর্মতত্ত্ব, চিকিৎসা, কলা এসব অনুষধ ছিল।ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয় কোনো না কোনো চার্চের আন্ডারে ছিল।এবং  বর্তমানে যেসব প্রাচীন  বিশ্ববিদ্যালয় আছে তা ও কোনো না কোনো চার্চ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে ছাত্ররা যা ইতালির বালোনিয়াতে অবস্থিত। বর্তমান নাম ইউনিভার্সিটি অব বলোনিয়া।এটি চার্চের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো ফলে এর সনদ দেয়ার অধিকার ছিল না।ইউরোপের আরো কিছু প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় যেমন, প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, প্যালেনসিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি কারই সনদ দেয়ার ক্ষমতা ছিল না শুরুতে। পরে এনলাইন্টমেন্টের পর চার্চের ক্ষমতা লোপ পায় আর এসকল বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা পায়। চার্চের অধিনে জ্ঞানগত কোনো স্বাধীনতা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের তখন এমন কিছু অধ্যায়ন করা যেত না যা চার্চ এর শিক্ষা ও রাজার বিরুদ্ধে যেত।এমনকি সমাবর্তনে আনুগত্যের শপথ নিতে হত।চার্চের বিরুদ্ধে গেলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হত।গ্যালিলিও ও ব্রুনো এর অন্যতম উদাহরণ। এনলাইন্টমেন্টের ফলে পরিবর্তন আসতে থাকি আর ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে থাকে।

 

উনিশ শতকের শুরুতে ইউরোপে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করে।এগুলোকে নতুন প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয় বা আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। প্রথম গবেষণাকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় হল জার্মানি 'বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়',যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮০৮ সালের দিকে।এখানে শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠ গবেষক আর ছাত্রদের  বলা হতো তরুণ গবেষক। আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপকার বলা হয় দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট ও ভাষাতাত্ত্বিক ভিলহান্ম হামবোল্ডট। কান্ট জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারণার প্রবর্তক। কান্টের মতে জ্ঞান দুই ধরনের। প্রাক-সিদ্ধ( a prior) ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান(a posteriori)অভিজ্ঞতা নির্ভর জ্ঞান ইন্দ্রিয় নির্ভর তাই ভুল হতে পারে। কিন্তু প্রাক-সিদ্ধ জ্ঞান অভিজ্ঞতা নির্ভর নয়, তাই এটি ভুল হবার সম্ভাবনা নেই। কান্টের মতে প্রাক-সিদ্ধ সংশ্লেষণাত্মক জ্ঞান হল সার্বিক জ্ঞান।আর বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত সার্বিক জ্ঞানের প্রচার কেন্দ্র। এই জ্ঞানের একমাত্র মাধ্যম হল যুক্তিনির্ভর বুদ্ধি। সার্বিক জ্ঞান সমাজ,ধর্ম, প্রচলিত জ্ঞানের বিরুদ্ধে যেতে পারে।যুক্তিনির্ভর যে ফলাফল আসে তাই গ্রহণ করতে হবে ধর্মের বিরুদ্ধে যায়। হামবোল্ডট জ্ঞানগত স্বাধীনতার ধরণা সামনে আনেন। তারমতে শিক্ষকের সাথে সাথে ছাত্রদের ও পাঠক্রম বেছে নেয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে।তার মতে একজন  শিক্ষক উপদেষ্টা (supervisor) এবং একজন ছাত্রক গবেষক। হামবোল্ডটের প্রস্তাব সে সময় গৃহীত না হলেও পরবর্তীতে আমেরিকায় তা আইনের ভিত্তি পায় এবং বিকাশ লাভ করে। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ চলার ফলে অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল ছিল।অর্থনীতি সচল করতে যুক্তরাষ্ট্র অনেকগুলো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে, যার মধ্যে কৃষি ও প্রকৌশল বিষয় অন্তর্ভুক্ত বাধ্যতামূলক ছিল। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ল্যান্ড- গ্রান্ট বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়।কারণ এসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি খরচে চলত না। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি বরাদ্দ ছিল,যার আয় দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ জোগাড় করা হতো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল ও কৃষি বিষয়ে গবেষণার যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এখান থেকে পরবর্তীতে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশ হয়।

 

 

ঔপনিবেশিক আমলে ইংরেজরা দাপ্তরিক কাজে ইংরেজি ভাষা করে।তাদের প্রচুর জনবল দরকার হয়।ফলে জনবল জোগান দিতে ইংরেজিরা প্রতিষ্ঠা করে অনেকগুলো কলেজ। এসব কলেজের মূল লক্ষ্যছিল ইংরেজি জানা জনবল তৈরি করা। কিন্তু এসব কলেজের মান ভাল ছিল না, যেহেতু বেশিরভাগ কলেজ ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত হতো। এ সমস্যা দূর করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় কলকাতা,মাদ্রাজ ও মুম্বাই  বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় পাঠদান বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। এরা শুধু পরীক্ষা নিতে পারতো।কিন্তু এতেও শিক্ষার মানের উন্নতি হয়নি। উপনিবেশিক আমলে ভারতবর্ষের অবস্থা আমেরিকার মত ছিল। ব্রিটিশ সরকার চাইলে আমেরিকার মত ল্যান্ড-গ্রান্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে কৃষির উন্নতি সাধন করতে পারতো।কিন্তু তাদের প্রয়োজন ইংরেজি শিক্ষিত ভারতীয়।এর ফলে উপনিবেশিক আমল থেকে এ অঞ্চলের মানুষের চিন্তা তৈরি  হয় সরকারি চাকরির। পরীক্ষায় কোনোমতে পাশ করার সংস্কৃতি এই অঞ্চলে শিক্ষার কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি।ফলে লর্ড কার্জন সিধান্ত নেন এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিবর্তন আনার।ততোদিনে ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পাঠদান থেকে গবেষণাকেন্দ্রীক বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর হলেও,ব্রিটিশরা প্রতিষ্ঠা করে পাঠদানকেন্দ্রীক মধ্যযুগীয় বিশ্ববিদ্যালয়।এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তখনও কৃষিবিষয়ে পাঠদান হত না।পাঠদান হতো দর্শন,ইংরেজি সাহিত্য ও দর্শন। এখনো পর্যন্ত আমরা সেই মধ্যযুগীয় পাঠদানকেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামোতে আছি।

 

পোস্ট-কলনিয়াল সময়ে এসে বর্তমান  বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে শুধু কাঠামোগত পরিবর্তন যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন এরসাথে প্রাক-ঔপনিবেশিক শিক্ষার সাথে সম্পর্ক এবং জ্ঞানগত ও আইনগত স্বাধীনতা। প্রাক-ঔপনিবেশিক সময়ে এই অঞ্চলে অনেক প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্ণনা পাওয়া যায়। নালন্দা,সোমপুর ইত্যাদি বিহারে দর্শন, জ্যোতি বিজ্ঞান,যুক্তিবিদ্যা, গনিত চর্চা করা হতো।এসব প্রাচীন গবেষণার সাথে বর্তমানের মেলবন্ধন প্রয়োজন। এছাড়া বর্তমান  বিশ্ববিদ্যালয়ের  জ্ঞানগত ও আইনগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আংশিক স্বাধীনতা থাকলেও,এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবৃত শিক্ষা যদি সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা ধর্মের বিরুদ্ধে যায়, তবে সে শিক্ষক বা শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ঝামেলা মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।এর ফলে এখানে গবেষণার উৎসাহ নেই।এসমস্যা দূর করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণামুখি হবে। সেই সাথে পশ্চিমা জ্ঞানকে সার্বিক ও পরম সত্য এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি  পরিবর্তন করে জ্ঞানতাত্ত্বিক  স্বাধীনতা আনতে হবে।

~By Tasrif Ayaz Apurbo

          বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভব, বিকাশ ও বিউপনিবেশায়ন সৈয়দ নিজার ( ভাবাংশ ) বিশ্ববিদ্যালয় এর আবির্ভাব কোন কিছুই হঠাৎ করে আবির্ভাব হয় ন...